কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের বাঘের হাট এলাকার বাজার সংলগ্ন জিঞ্জিরাম নদীতে ব্রিজ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে ১৩ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। কখনো নৌকায় আবার কখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
এদিকে ব্রিজের দাবিতে দপ্তরে দপ্তরে ধর্না দিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি। জনপ্রতিনিধিরাও তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখেনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে শীত বর্ষা সকল মৌসুমে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাগের হাট এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে জিঞ্জিরাম নদীত। নদীর দুই পাড়ে চলাচলের রাস্তা থাকলেও জনৈক ইস্রাফিলের বাড়ি সংলগ্ন নদীতে ব্রিজ না থাকায় তেকানি ঝগড়ারচর, চেংটাপাড়া, কাউয়ারচর, চরবোয়ালমারী, চরেরগ্রাম, ধর্মপুর, ঝগড়ারচর ও ডাঙ্গুয়াপাড়াসহ ১৩ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও ওই এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ কৃষিপণ্য ও অসুস্থ রোগী আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও নির্মিত হয়নি একটি ব্রিজ। ফলে কোন কোন বছর বাঁশের সাঁকো আবার কোন বছর নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারপার হতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে নৌকা পানির নিচে তলিয়ে দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন অনেকেই। এর আগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কয়েকবার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার হতেন। গত বন্যায় জিঞ্জিরাম নদীর উপর বাঁশের সাঁকো থাকলেও একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ওই সাঁকোটির মাচা খুলে নদীর কিনারেই স্তূপ করে রাখা হয়। তবে সাঁকোর খুঁটিগুলো নদীতেই রক্ষিত রয়েছে।
স্থানীয় হাবিবুর রহমান, আব্দুর রহিম, আলেক জানান, রৌমারী উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় পড়েছে অত্র এলাকার মানুষ। বর্তমানে উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। এই নৌকা দিয়ে কৃষক কৃষি পূর্ণ বাজারজাত করণ, ধান, শাকসবজি, তরিতরকারি বাজারে আনা নেওয়ার সমস্যা হচ্ছে। সেই সাথে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩০ হাজার লোকজন যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছে।
ওই এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী মনিয়া খাতুন জানান, প্রায় ৮০ মিটার জিঞ্জিরাম নদীতে ব্রিজ না থাকায় সাড়া বছর নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে স্কুলে যাচ্ছি। তা ছাড়া পারাপার হলেই ৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।
এলাকাবাসী মহির উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই নদীর উপর বাঁশর সাঁকো দেওয়া হয়েছিল। সেটা দিয়ে সবাই সহজে যাতায়াত করতে পারত। এখন একটি মহলের কারণে বাঁশের সাঁকোটি খুলে রেখেছে এবং তাদেরই লোক দিয়ে ঘাটে নৌকা দেওয়া হয়েছে। নৌকার মালিককে জনপ্রতি ৫ টাকা করে চাঁদা দেওয়া লাগে।
এলাকাবাসী ইউনুস খান ক্বারি বলেন, ব্রিজ না থাকায় এখানকার সকল পেশাজীবী মানুষের চলাচলে অনেক সমস্যা হয়েছে। আমি ব্রিজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্থানীয় দাঁতভাঙ্গা ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করে। কয়েকবার উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন
উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েত হোসেন বলেন, বাঘেরহাট জিঞ্জিরাম নদীর উপর ৬০ মিটার ব্রিজের জন্য ডিও পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ব্রিজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।