রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ও চরশৌলমারী ইউনিয়নসহ আশপাশের প্রায় ৫ হাজার পরিবার একসময় তাঁত পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু নানা সমস্যায় পড়ে পর্যায়ক্রমে তাঁতঘর বন্ধ রেখে অধিকাংশ মানুষ এ পেশা থেকে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এখনো সেখানে কয়েক শ তাঁতি পরিবার বাপ-দাদার পেশা অতি কষ্টে ধরে রেখেছেন।
শনিবার উপজেলার নামাজেরচর, চরকাজাইকাটা, ওয়াহেদনগরসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গোটা এলাকা জুড়েই নীরবতা। যদিও শীতের চাদর তৈরির জন্য এখন তাঁতগুলো ব্যস্ত থাকার কথা। এর মধ্যেই চলছে কিছু তাঁত। তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতে একটি চাদর বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়। লুঙ্গি ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। মাফলার ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। তাদের উত্পাদিত পণ্য উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খোলা দোকানে বিক্রয় করেন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শীতে তাদের তৈরি লুঙ্গি, শীতের চাদর শুধু টাঙ্গাইল জেলায় নিয়ে ছোট ছোট কাপড়ের দোকানে পাইকারী দরে ও বাকিতে বিক্রয় করা হয়। বার বার টাকার জন্য যেতে হয় টাঙ্গইলে। পশ্চিম মিয়ারচর গ্রামের জুলফিকার তাঁতি জানান, তাঁতগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শীতের শেষে ঋণদাতারা মাথার ওপরে খড়গ নিয়ে হাজির হবেন। চরশৌলমারী গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি তাদের তাঁতের তৈরি পোশাকের ন্যায্য মূল্যে সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা করত, তাহলে তারা লাভবান হতেন। তাদের কষ্ট দেখে একটি বেসরকারি ব্যাংক প্রথমে ৯ জনকে ৫০ হাজার টাকা অল্প সুদে সরল ঋণ প্রদান করেন। সঠিক সময়ে তারা ঋণ পরিশোধ করায় এখন ১২ জনকে ৬০ হাজার টাকা করে দ্বিতীয় ধাপে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের কিছু ঋণ তারা পাচ্ছেন। এতে সুদের টাকা কম দিতে হচ্ছে। সরকারের সব তপশিলি ব্যাংক তাদের দিকে তাকালে আর সুদের বোঝা বইতে হবে না। চরশৌলমারী তাঁত সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, তাদের সমিতির সদস্য ১৮৭টি পরিবার। সরকার যদি তাদের এককালীন অনুদান, বিদ্যুতের সুব্যবস্থা এবং মধ্যস্বত্ব্বভোগীদের হাত থেকে বাঁচায়, তাহলে তারা আগের মতো আবারও জাগিয়ে তুলতে পারবেন তাঁতশিল্পকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান জানান, ‘নানা কারণে তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে। তারা সরকারের সব ধরনে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন। আমি আমার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো শিল্পগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।’