অসময়ে ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নে শুষ্ক মৌসুমে আবার তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহের তীব্র ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। অন্তত ৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনঝুঁকিতে আছে স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তাসহ শতাধিক স্থাপনা।

কয়েক মাস আগে বর্ষাকালে ফেলা জিও ব্যাগ ভাঙনের ফলে ভেসে গেছে। শীত মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের এই আগ্রাসী রূপ আগে কখনো দেখেনি এলাকাবাসী। নিজেদের ভিটামাটি হারানোর অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে তারা। 

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত সানন্দবাড়ী অঞ্চলটি একটি প্রসিদ্ধ প্রাচীন জনপদ।

এখানে জামালপুর জেলার সবচেয়ে বেশি ইজারামূল্যের হাট সানন্দবাড়ী বাজারসহ একটি ডিগ্রি কলেজ, ছয়টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, দুটি সিনিয়র আলিম মাদরাসা, ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সোনালী ব্যাংক, পুলিশ তদন্ত পকন্দ্রসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। নদীভাঙনস্থল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে থাকা এসব প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেসব জমিতে ভুট্টা, গমসহ বিভিন্ন ফসল বপন করে আশায় বুক বেঁধেছিলেন কৃষক, অসময়ের নদীভাঙনে সেসব ফসলি জমি ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। গত বর্ষা মৌসুমে তীব্র ভাঙনের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শুষ্ক মৌসুমে আবার ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

এ বছর বর্ষাকাল থেকে শুরু করে বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে এরই মধ্যে নদীর গর্ভে চলে গেছে পাটাধোয়াপাড়া, মৌলভীরচর, টুপকারচরসহ অনেক গ্রাম এবং কিছু গ্রামের অংশবিশেষ। কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ১৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। সেসব বস্তা নদীর ভাঙনে ভেসে গেছে। পাটাধোয়াপাড়া গ্রামের নতুন ৯০০ মিটার এলাকা নতুন করে ভাঙনকবলিত হয়েছে। 

সানন্দবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদ সানন্দবাড়ী এলাকায় এই শুষ্ক মৌসুমে যেভাবে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে, আমার জীবনে এর আগে আমি তা দেখিনি।

সানন্দবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে নদী ভাঙতে ভাঙতে জমাজমি-ঘরবাড়ি বহু কিছু বিলীন হয়ে গেছে। এখনই যদি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে সানন্দবাড়ী অঞ্চলটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।’

নদীভাঙনে খোলাবাড়ী এলাকার জাহিদুল ইসলাম, ডা. আ. ছালাম, মৌলভীরচরের মোশারফ হোসেন, আবু দাউদ, আজিজুর রহমানসহ অসংখ্য লোক জমিজমা হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়েছেন।

চর আমখাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লাভলু বলেন, ‘এই সরকারের আমলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ বহু উন্নয়নকাজ হয়েছে; কিন্তু এই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কারণে অন্যান্য উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।’

চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন শুরু হলে বহু চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছি। এখন শুষ্ক মৌসুমে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে, জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এ ব্যাপারে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৯০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি, সেই স্থানে কাজ করতে ৯ কোটি টাকার মতো লাগবে।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, পাটাধোয়াপাড়ার ভাঙন প্রতিরোধে ৯০০ মিটার এলাকায় অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে তীর প্রতিরক্ষাকাজের জন্য ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি প্রস্তাবনা ডিজির দপ্তর হয়ে অর্থ পরিদপ্তরে জমা আছে। অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া পাঁচ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদক: সম্পাদকের নাম

অফিস এড্রেস: রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম - ৫৬৫০

অনুসরণ করুন

© 2024 Muktanchal News Portal.

Built with care by Pixel Suggest