অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, দক্ষ ও চাহিদামাফিক জনবল, প্রয়োজনী ওষুধের অভাবে দেওয়ানগঞ্জের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। যে কারণে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।
অনেকের অভিযোগ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না চিকিৎসক। অনেক সময় চিকিৎসক পাওয়া গেলেও মেলে না ওষুধ। যে কারণে ভোগান্তিতে রয়েছেন উপজেলার চারটি ইউনিয়নের রোগীরা।
দেওয়ানগঞ্জ সদর, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, ডাংধরা ইউনিয়নে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনো এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ নেই। দায়িত্ব পালন করছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। তারা রোগীদের পরিবার পরিকল্পনা সেবা, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, কিশোরী প্রজনন, প্রাথমিক চিকিৎসা ও পুষ্টিসেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে শুধু চিকাজানী ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে উপসহাকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রয়েছে। হাতিভাঙ্গা, দেওয়ানগঞ্জ সদর ও ডাংধরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। এই কেন্দ্রগুলো চলছে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) দিয়ে।
কাঠারবিল এবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘হাতিভাঙ্গা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। যখনই চিকিৎসার জন্য যাই, তখনই শুনি ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। মাঝে মাঝে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বসে কিছু ওষুধ বিতরণ করেন। তারা ডাক্তার নন।’ তিনি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ কিলোমিটার দূরে। ভাঙাচোরা পথঘাট। ফলে ছোটখাটো রোগেও দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিদিন রোগীদের উপজেলা সদর হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।
সাপমারী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে নেই কোনো ডাক্তার, নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। সেই কারণে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে ফেরত আসতে হচ্ছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি মা-শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি সেবার ন্যূনতমও মিলছে না এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এ কারণে এখানকার রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পল্লিচিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। রোগের অল্প জটিলতায়ও প্রতিদিন ছুটতে হচ্ছে উপজেলা-জেলা হাসপাতালে। নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানগঞ্জ সদর। দেওয়ানগঞ্জ সদর থেকে উত্তরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের দূরত্ব হাতিভাঙ্গা ১৫, পাররামরামপুর ২১, চরআমখাওয়া ২৮ ও ডাংধরা ৪০ কিলোমিটার। যাতায়াতের একমাত্র সড়ক দেওয়ানগঞ্জ-ডাংধরা, যার বেশি অংশ ভাঙাচোরা। এ ছাড়া পাররামরামপুর ও চরআমখাওয়ায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে একজন এমবিবিএস ডাক্তার বসার কথা থাকলেও বসেন না।
ডাংধরা ইউনিয়নের বাঘারচরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যায় না। প্রাথমিক চিকিৎসার নামে শুধু জ্বর, কাশি ও ঠান্ডার ওষুধ দেওয়া হয়। এসব ওষুধও বেশির ভাগ সময় থাকে না। জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডার মাত্রা বেশি হলে অন্যত্র ডাক্তারের কাছে ছুটতে হচ্ছে। এ উপজেলার উত্তরাঞ্চলের চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করার জন্য সানন্দবাড়ীতে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চিকিৎসাসেবার মাত্রা বৃদ্ধি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তা হলো, অবকাঠামোগত স্বল্পতা, দক্ষ জনবলের অভাব, জন্মনিরোধক সামগ্রীর স্বল্পতা ও সাধারণ রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধের স্বল্পতা। অন্যদিকে, আমাদের একজন এফডব্লিউভিকে অতিরিক্ত হিসেবে দুই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাদের সপ্তাহের তিন দিন এক কেন্দ্রে, বাকি তিন দিন অন্য কেন্দ্রে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনুপস্থিতির তিন দিন একটা কেন্দ্রে গিয়ে রোগীদের ফেরত আসতে হয়। এটা আমাদের বিশেষ সীমাবদ্ধতা।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন ডিজিটাল এক্স-রে, অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, এনালাইজার মেশিনসহ আধুনিক ল্যাব স্থাপন, জিন এক্সপার্ট মেশিন, ডেন্টাল ইউনিট ও নতুন অ্যাম্বুলেন্স হয়েছে। দূরত্বের কারণে উপজেলার উত্তরাঞ্চলের মানুষের এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তি হচ্ছে। তার জন্য সানন্দবাড়ীতে ২০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।