সাড়ে চার কোটি টাকা মজুরি বকেয়া মাটিকাটা শ্রমিকদের

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৪০ দিনের মাটিকাটা কর্মসূচির (ইজিপিপি) মজুরি পাচ্ছেন না জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার মাটিকাটা শ্রমিকরা। যারা দিন আনেন দিন খান, কাজ করার কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও শ্রমের মূল্য না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

উপজেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিল জমা দিতে বিলম্ব করায় এই সমস্যা হয়েছে। এদিকে মাটিকাটা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকা না পেয়ে সংসার চালাতে পারছেন না তারা।

দিনমজুরি বিক্রি করলে ৫০০ টাকা পাওয়া যায়, কাজ শেষ করলে হাতে হাতে দিয়ে দেয়। এই কাজ করে তারা বেকায়দায় পড়েছেন। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৮৫৩ জন মাটিকাটা শ্রমিক কাজ করেছেন। তার ভেতর দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ২৬৯ জন, চুকাইবাড়ী ইউনিয়নে ১৭২ জন, চিকাজানী ইউনিয়নে ২৯৭ জন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে ৪৮৮ জন, হাতীভাঙ্গা ইউনিয়নের ২৪৩ জন, পাররামরামপুর ইউনিয়নের ৪৬৩ জন, চর আমখাওয়ার ইউনিয়নে ৫৬৩ জন, ডাংধরা ইউনিয়নে ৪৭৫ জন।

 

দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি হিসেবে চার কোটি ৪৭ লাখ, ৩৭ হাজার ২০০ টাকা বিল হয়। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর শীতকালের শুরুতেই গ্রামীণ ভাঙাচোরা মাটির সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়।  বিভিন্ন ইউনিয়নের অতি দরিদ্র নারী, পুরুষদের ভেতর থেকে বাছাই করে এসব শ্রমিক নির্বাচন করা হয়। সূত্র জানায়, প্রায় দুই মাস আগেই এই প্রকল্পের মাটিকাটা শেষ হয়ে গেছে।

 কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিল জমা দিতে বিলম্ব করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। 

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের মাটিকাটা শ্রমিক ফকির আলী, ফুল মিয়া, তাসলিমা, সাইদা বেগম বলেন, ‘আমরা দিনমজুর লোক, অভাবের সংসার, দিন আনি দিন খাই, দুই মাস হয়ে গেল, কাজ করে এখনো মজুরি পাচ্ছি না।  কাজ করে যদি মজুরি না পাই তাহলে কী লাভ?  আপনারা লেহালেহি করে একটা ব্যবস্থা করে দেন।’

চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান বলেন, জামালপুর জেলার সব উপজেলার শ্রমিকদের বেতন হওয়া শেষ, এখন শুধু আমাদের উপজেলায় বাকি আছে। কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা থাকলে বকেয়া টাকা দ্রুত ছাড় হতো।

বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিরুজ্জামান রাখাল আশঙ্কা  প্রকাশ করে বলেন, এভাবে শ্রমিকদের বেতন দিতে বিলম্ব করলে আগামীতে আর এই কাজে লেবার পাওয়া যাবে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাযহারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, দেওয়ানগঞ্জ সদর, হাতীভাঙ্গা, পার রামরামপুর, চিকাজানী  ইউনিয়নের বিল আমরা অনেক পরে হাতে পেয়েছি। পরিপত্রের বিধান হচ্ছে, সব ইউনিয়নের বিল একত্রিতকরণ হওয়ার পর অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ রাতে বিল পাঠিয়েছি। বিল জমা দেওয়ার জন্য আমি বারবার চেয়ারম্যান সাহেবদের বলেছি। বিল জমা দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অনেকগুলো দপ্তর হয়ে বিল পাস হয়, তাই কিছুটা সময় লাগে। তবে আশা করা যায়, এই সপ্তাহে এই উপজেলার টাকা ঢুকবে। গত সপ্তাহে বকশীগঞ্জ উপজেলার টাকা ঢুকেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সম্পাদক: সম্পাদকের নাম

অফিস এড্রেস: রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম - ৫৬৫০

অনুসরণ করুন

© 2024 Muktanchal News Portal.

Built with care by Pixel Suggest